Monday, September 7, 2015

মাইজভাণ্ডারীদের ব্যাবসার ইতিবৃত্ত

মাইজভাণ্ডারীদের ব্যাবসার ইতিবৃত্ত
______________________
মাইজভাণ্ডারীদের ব্যাবসার ইতিবৃত্ত বলার
আগে একটু ইতিহাস বলে নেই। মাইজভান্ডারের
প্রধান আধ্যাত্মিক পুরুষ হলেন সৈয়দ
আহমদউল্লাহ মাইজভান্ডারি। ১৮২৬ সালে
তিনি জন্ম নেন এবং ১৯০৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ
করেন। ওনার পর মাইজভান্ডারের আধ্যাত্মিক
গুরু হন সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারি।
তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩৫ সালে। সৈয়দ
আহমদউল্লাহ এবং সৈয়দ গোলামুর রহমান
সম্পর্কে ছিলেন চাচা ভাতিজা। সৈয়দ
গোলামুর রহমানের মৃত্যুর পর তার
স্থলাভিষিক্ত হন তারই ভাতিজা ও মেয়ে
জামাই এবং সৈয়দ আহমদউল্লাহ্র নাতি সৈয়দ
দেলোয়ার হোসেন। তিনি মারা যান ১৯৮২

সালে। সৈয়দ দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর
তার ছেলেরা আলাদা হয়ে পড়ে। ওনার ছোট ৪
ছেলে সৈয়দ আহমদউল্লাহ্র মাজার নিজেদের
নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। কারণ তত দিনে ওই
মাজার থেকে ভালোরকম আমদানী হতে
থাকে। সৈয়দ দেলোয়ার হোসেনের বড় ছেলে
সৈয়দ জিয়াউল হকের এসব বৈষয়িক বিষয়ে
আগ্রহ না থাকায় তিনি আলাদা হয়ে পড়েন।
তার আগ্রহ না থাকলেও তার পরিবারের
এইসবে ভালোই আগ্রহ ছিলো। তাই ১৯৮৮ সালে
সৈয়দ জিয়াউল হক মারা যাওয়ার পর তড়িঘড়ি
করে তার কবরের উপর মাজার বসানোর কাজ
শুরু করে দেয়। পরবর্তিতে সৈয়দ আহমদউল্লাহ্র
মাজারের আয় নিয়ে ৪ ভাইয়ের মধ্যে
মনোমালিন্য হলে তারা আলাদা হয়ে পড়ে।
মাইজভান্ডারে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন
ওরশ হয়ে থাকে। প্রত্যেকের জন্মবার্ষিকি ও
মৃত্যুবার্ষিকি উপলক্ষে বছরের বিভিন্ন সময়ই
এখানে আলাদা আলাদা ওরশ হয়। প্রত্যেক
ওরশের আলাদা বিস্তারিত বিবরন দেয়া
মোটামুটি অসম্ভব।
সবচাইতে বড় ওরশের কাহিনী শুনি।
সৈয়দ আহমদউল্লাহ্র ওরশ অনুষ্ঠিত হয় ১০ই মাঘ
বা ২৩ই জানুয়ারি। সৈয়দ আহমদুল্লাহর ভক্ত বা
মুরীদ সারা বাংলাদেশে রয়েছে। ওরশ
উপলক্ষে সারা বাংলাদেশ থেকে
মাইজভান্ডারে তার ভক্তরা আসে। অনেক বড়
জমায়েত হয় ১০ই মাঘের ওরশে মাইজভান্ডারে।
এ ওরশে প্রায় ১.৫-২ লক্ষাধিক মানুষের আগমন
হয় মাইজভান্ডারে। ওরশ উপলক্ষে মাজারে
কমপক্ষে ১০০০-১২০০ গরু মহিষ সওয়াবের আশায়
দান হিসেবে আসে। ছাগলের সংখ্যা বাদ
দিলাম। কারণ এর সঠিক সংখ্যা আমার
নিজেরও জানা নেই। এর অর্ধেক দিয়ে
মোটামুটি ২ দিন ধরে মেজবান চলে যা তবারুক
হিসেবে খাওয়ানো হয়। বাকি অর্ধেক বিক্রি
করে দেয়া হয়। এবার আসি নগদ টাকার কথায়।
মাজারে যেই ঢুকুক, সে অন্তত ১টা ১০০ টাকার
নোট দানবাক্সে রেখে আসে। আর যদি সে
বর্তমান গদীনশিনের অর্থাৎ ৪ ভাইয়ের কারো
দোয়া বা ফু চায় তাহলে তাকে অন্তত
৫০০-১০০০ টাকা হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা
অপেক্ষা করতে হয়। এবার পাঠক আপনারাই
হিসাব করুন এখান থেকে কত আয় হতে পারে।
আমি দেখেছি দুরদুরান্ত থেকে এমন সব মানুষ
ওরশে আসে যারা হয়ত দুবেলা দুমুঠো
ভালোভাবে খেতে পায় না কিন্তু ফু নিতে
তাদের হাজারো টাকা খরচ করতে আপত্তি
নেই। তারা মাজারের পাশের পুকুরের পানি
বোতলে ভরে নিয়ে যায় পবিত্র পানি
হিসেবে। আরেকটা মজার ব্যাপার হল এই
এলাকা কিন্তু ধীরে ধীরে কুষ্টিয়ার লালন
শাহের মাজারের এলাকার মত গাজাখোরদের
আশ্রমে পরিণত হচ্ছে। ওরশের সময় এখানে
বিপুল পরিমানে গাজার আমদানি হয়। রাত যত
গভীর হয় তত ভাণ্ডারী গানের তালে তালে
নারী পুরুষের এক ধরনের নৃত্য চলে !!
আস্তাগফিরুল্লাহ !
এতো গেলো ওরশের কথা। ওরশ ছাড়াও
মাজারগুলোর সাপ্তাহিক আয় কিন্তু কম না।
প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে সৈয়দ
আহমদউল্লাহ্র মাজারে কমপক্ষে ১০ লাখ
টাকার নগদ আয় হয়। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে
প্রায় ১০-১২ টা গরু মহিষ দান হিসেবে আসে।
ধর্মের নামে ব্যাবসা, নোংরামি বন্ধ করার
কি কেউ নেই ??
বন্ধু !!!!!!!!!!!!
আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে,এই সমস্ত ধর্ম
ব্যাবসায়ীদেরকে প্রতিহত করতে ।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন ।
আমীন

1 comment: